March 13, 2025
টাকা ছাপানো নিয়ে ভাবনা

টাকা ছাপানো নিয়ে ভাবনা

সুদীপ্ত স্বপ্ন

বাংলাদেশ ব্যাংক এর দেওয়া তথ্য মোতাবেক নতুন টাকা ছাপানো হয়েছে। যার পরিমাণ ২২,৫০০ কোটি। কারণ হিসেবে দেখানো হয় ছয়টি ব্যাংকের আমানতকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এই সহায়তা। যদিও শোনা গিয়েছিল যে টাকা ছাপিয়ে ব্যাংকগুলোর খুব একটা বেশি উপকার হবে না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে জুন পর্যন্ত মোট ছাপানো হয় ৪৩,০৯৮ কোটি টাকা! এভাবে টাকা ছাপিয়ে তারল্য সংকট সমাধানকে তড়িৎ উদ্যোগ হিসেবে ধরা হয়েছে। কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল কি হবে তা ভাববার বিষয়।

২০২৪ সালেই এই সংকট তীব্র হয়। বিশেষ করে ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোসহ বাণিজ্যিক অন্যান্য ব্যাংকগুলোর প্রয়োজনের ও সাধ্যের অতিরিক্ত  ঋণ দেওয়ায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা সামলে নিতে আইনানুগ প্রচলিত নিয়মের বাইরে গিয়ে অর্থায়ন করা হয়। যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতিতে। অঙ্কটা সহজ। আদতে টাকা ছাপিয়ে গাণিতিক স্থিতি সামাল দিলেও এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রভাবিত হচ্ছে।

এক্ষেত্রে ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থা নিয়ে বলা যায়। যদিও ইসলামি ব্যাংকগুলো  সুদ ভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থাকে স্বীকার করে না, যেমন এক্ষেত্রে তাদের লাভ কিংবা ক্ষতির উপর ভিত্তি করে ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। কারণ ইসলাম ধর্ম সুদ দ্বারা অর্জিত প্রবৃদ্ধিকে হারাম হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। আর বিজিনেস এবং রিস্ক এর মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধি পাওয়াকে হালাল আখ্যায়িত করে। আর ইসলামের দৃষ্টিতে মুনাফা বলতে হালাল উপায়ে বৃদ্ধিকে। ইসলামিক আবহে পরিচালিত ব্যাংক গ্রাহককে অর্থ না দিয়ে তারা পণ্য দেয়। আর বিপরীতে অর্থ নিবে অতিরিক্ত। এক্ষেত্রে মনে করতে হবে যে, তারা পণ্যটি গ্রাহকের কাছে বিক্রি করেছে। সুদ এর পরিবর্তে ইসলামের দৃষ্টিকোণে মুদারাবা, কার্য-হাসানা, যাকাতকে বৈধ করা হয়েছে। ধারণাটা এই যে, সমাজের সব সচ্ছল ব্যক্তি যাদের যাকাতের সিলিং এ পড়েন তারা ঠিকঠাক যাকাত প্রদান করলে সমাজ থেকে নিমিষে সমস্ত দারিদ্রতা দূর হতো।

লিখতে গিয়ে কথাগুলো চলে আসে। অর্থাৎ বলা যায় এই প্রক্রিয়ার ব্যাংকিং-ব্যবস্থা অতিরিক্ত ঋণ প্রদান করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল। সাধারণ ব্যাংক যেখানে মূলধনের শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ অবধি ঋণ সুবিধা দেয় সেক্ষেত্রে ইসলামিক ব্যাংকগুলো ৯২ ভাগ পর্যন্ত দেয়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েছে স্বনামে নিন্দিত  ঋণ খেলাপিরা। তারা এই সুযোগকে লুফে নিয়েছিল। ফলে ইসলামিক ব্যবস্থাতে চলা ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের ঋণ দেয়ার অঙ্ক বৃদ্ধি পায়। কারণ হিসেবে বলা যায়, দুর্বলতাগুলো ও পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের ভূমিকা। আশা করি দায়িত্বশীল ব্যক্তি বা দপ্তর মূল কারণ খুঁজে বের করবে।

প্রশ্ন জাগে, নোট না ছাপিয়ে বিকল্প কোনও বন্দোবস্ত কি করা যেতো না? সমস্যা গভীরতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো তাদের কাছে গচ্ছিত আমানত এর বিপরীতে সর্বনিম্ন যে সুদ তা দিতে পারছে না। আমানতের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। অপরদিকে ঋণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর খেলাপি ঋণের বৃদ্ধিতো আছেই। আমানত কিংবা ঋণের বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়ার জন্য এডিআর কিংবা এসএলআর সংরক্ষণ করছে। ফলে মার্কেটের উপর নির্ভরতা শতগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, পাচ্ছে। যার ফলে কলমানি রেটও বাড়ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!