টিআইসি
ঢাকায় আগের বাসায় যখন থাকি কৌতূহলবশত একবার মনে ইচ্ছে হলো বাসার পাশে থাকা রাস্তাটি মেপে দেখার। মনে মনে ভাবলাম কত হাত হতে পারে? এর মূল কারণ ছিল মাঝেমধ্যেই এখানে এমন জ্যাম হতো যার ফলে সব যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকতো। সবাই অপেক্ষায় থাকতো কখন নিস্তার পাওয়া যাবে। আর ঘর থেকে হর্নের বিকট শব্দ ও মানুষের তীব্র চিৎকারে মনে হতো বোধহয় শহরের ব্যস্ততম কোন মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। এই সমস্যা ঢাকা শহরের সব অলিতে গলিতে অহরহ হচ্ছে।
রাস্তাটা হয়ত ৭ থেকে ৮ হাত হবে। তাই বাড়ির দারোয়ানকে মাপার দায়িত্ব দিয়ে জানলাম সেটি মাত্র ৬ হাত! একটা মোটর গাড়ির কথা বিবেচনা করলে তা ৩ থেকে ৪ হাত হবে! এখন সেই রাস্তায় যদি একটা কার যাতায়াত করে তবে সাইকেল ছাড়া আর কোন বাহনের সাধ্য নেই তা অতিক্রম করার। ১শ ৫০ থেকে ২শ ফুট দীর্ঘ রাস্তা, একপাশ দিয়ে গাড়ি ঢুকলে অন্য কোনও গাড়ি কিংবা রিকশার সাধ্য নেই তা পার হতে পারবে। আর রাস্তাটা এমন যে একপ্রান্ত থেকে দেখা যায় না আরেক প্রান্ত থেকে কোন যানবাহন ঢুকেছে কিনা।
নাগরিক জীবন কেমন তা ধরলে আগে ঘর থেকে বেরিয়ে যে রাস্তা তার সেটার কথাই ধরি। এখানে সমস্যা কোথায় কেউ বলতে পারবেন? আমি ভেবে যা পেলাম তা হল রাস্তাটা প্রস্থে অনেক ছোট, তাহলে এতো ছোট কেমন করে হল? উত্তর কারও অজানা নয় নিশ্চয়! এই রাস্তা যাতায়াতের উপযোগী করার জনুয় যে পরিমাণ জায়গা দরকার ছিল তা কর্তৃপক্ষ পায়নি। কেন পায়নি? কারণ তারা যখন এই এলাকার বাড়ির মালিকদের কাছে জায়গা চেয়েছিল তখন তারা ২ থেকে ৩ হাতের বেশি জায়গা ছেড়ে দিতে রাজি হননি! কিপ্টামির একটা সীমারেখা আছে! আমি যেই বাড়িতে ছিলাম সেই মালিকের ঢাকা শহরে আরও কয়েকটা বাড়ি ছিল। কিন্তু রাস্তা করার জন্য জায়গা দিতে গিয়ে তার মনটা বোধহয় নিজের কিংবা ভাড়াটিয়াদের ভবিষ্যতের বিষয়টি একবার চিন্তাতেও আসেনি। মূল সমস্যাটা ছিল তার মনে। একহাত জায়গা বেশি ছাড়লে অনেক টাকার লোকসান হয়ে যাবে! আর তাই নেহায়েত নিজের মান রক্ষার জন্য দয়ে করে অতটুকু ছাড় দিয়েছেন! আর তা দিয়ে নিজেও উদ্ধার হয়েছেন, ভাড়াটিয়াদের উদ্ধার করেছেন, তথা মহল্লাবাসী কেউ উদ্ধার করেছেন।
আবার জায়গাটাও দিয়েছেন বাড়ির প্রাচীর ঘেঁষে! আশ্চর্য হই এই ভেবে যে সেই ভদ্রলোকেরও একটা মোটর গাড়ি ছিল! তিনি সেই বিষয়টাও চিন্তা করেননি। আর যখন তার নিজের গাড়িটা পারকিং করতে যান তখন ওই পুরো এলাকায় এমন জ্যাম বেঁধে যায়। আর যখন মুখোমুখি থাকে ২টি প্রাইভেটকার কারও আর নড়ার সাধ্যে থাকেনা। আরও মজার বিষয় হল ওই পরিস্থিতিতে গাড়ির মালিকরা সম্মান রক্ষার্থে ঝগড়া না করে নিজেদের দারোয়ান আর ড্রাইভারকে লাগিয়ে দেন ঝগড়া করতে! শিক্ষিত মানুষের এহেন কারবার আমি একটু কমই বুঝি! তো এতোই যখন শিক্ষিত বাবু তাহলে রাস্তার জন্য জায়গাটা দেয়ার সময় সেই শিক্ষা কোথায় ছিল? এখানে আরেকটি প্রশ্ন,যারা রাস্তার জায়গা নিয়েছেন তারা কিংবা যারা জায়গা দিয়েছেন তারা কি ভবিষ্যতটা ভেবেছিলেন? আলাপ করেছিলেন? শুধু লোকসানের অঙ্কটা করলে হবে আপনিও তো নাগরিক। আপনার মতো নাগরিকদের জীবন যে আপনার জন্য দুর্বিষহ হবে তা কি একবারও ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করেন নি।
এই হল ঢাকা শহরের অলিগলির নাগরিক জীবনের রাস্তা সম্পর্কিত খণ্ডচিত্র!